প্রশ্নোত্তরে সত্যমনা (৯)
কতটা হাস্যকর যুক্তি। ৪২০০টি ধর্ম আছে বলে কি ৪২০০টি স্রষ্টা থাকতে হবে? এমন কি হতে পারে না যে, স্রষ্টা একজনই কিন্তু মানুষ ধর্ম বানিয়ে নিয়েছে ৪২০০টি!হ্যাঁ, এটাই সত্য যে, সর্বকালে সর্বযুগে একজনই ঈশ্বর ছিলেন। আছেন এবং থাকবেন।
চলুন প্রধান প্রধান ধর্মগুলোর ইশ্বর সম্পর্কে জেনে নেই। আব্রাহামিক ধর্মগ্রন্থগুলো অর্থাৎ ইসলাম, খৃস্ট ও ইহুদী ধর্ম স্পষ্টভাবে বলে যে, স্রষ্টা একজন। তবে এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, স্রষ্টা সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই যে কোন ধর্মের ধর্মীয়গ্রন্থ থেকে জানতে হবে। কারণ, মানুষের দাবী দিয়ে তো আর স্রষ্টার সংখ্যা নির্ণয় হবে না! এখন যদি মুসলিমরা দাবী করে স্রষ্টা দুইজন।( অথচ কোরআন বলছে, বলো তিনিই আল্লাহ। তিনি এক। সূরা ইখলাস, আয়াত ১৷)সুতরাং অবশ্যই এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে জানতে হবে।
একইভাবে পারস্যের বিখ্যাত একটি পুরাতন ধর্ম হচ্ছে 'জৌনস্ট্রনিজম'। যা ৩৫০০-৪০০০ বছরের পুরাতন ধর্ম। যার প্রবক্তা হচ্ছেন, জোরাস্ট্রার। যাকে এ ধর্মের অনুসারীরা নবী জোরাস্ট্রার বলে থাকেন। তারা ছিলো এক ঈশ্বরবাদী। তাদের ধর্ম মতে স্রষ্টা একজন।
১/গত শতাব্দীতে এ বিষয়ে ব্যপক গবেষণা হয়। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, অস্ট্রিয়ান ক্যাথলিক ভাষাবিদ ও তত্ত্ববিদ WILHELM SCHMIDT। তিনি ১৯১৪-১৯৫৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ একটি সময় ব্যয় করেছেন শুধু এ বিষয়ে গবেষণা করে৷ তিনি ১২ ভলিউমের ৪৫০০ পৃষ্ঠার গবেষণামূলক বই প্রকাশ করেন। যার নাম 'The Origin of the Idea of God' (ঈশ্বরের ধারণার মূল উৎস)।
তিনি বলেন, ছোট বড় সকল ধর্মই একজন স্কাইগড বা আকাশ দেবতায় বিশ্বাসী। যিনি সকল দেবতাদের দেবতা। মহা দেবতা।
উদাহরণ সরূপ, প্রাচীন চায়নাতে বুড্ডিজম, ঠাওজ্ম এবং কন্ফিউসিজম এরও হাজার হাজার বছর আগে। সে সময় চীনের মানুষেরা 'শ্যান্ডি' নামের একজন মহা ঈশ্বরের ইবাদত করতেন। শ্যান্ডি মানে 'সুপ্রিম ডিআইটি' বা সর্বোচ্চ ঈশ্বর।
২/আরেকজন আমেরিকান অথর ও আর্টিস্ট ERNEST THUMPSOM SETON। তিনি তার বই 'The Gospel of the Red man' এ ল্যাটিন আমেরিকানদের ধর্মবিশ্বাস এস্টেক্স, মায়ান এবং ইংকাস সম্পর্কে লিখেন। তিনি বলেন, তারা 'ওয়ান গ্রেট ওভার সোলে' বিশ্বাস করে। অর্থাৎ একঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী।
৩/ ANDREW LANG, তিনি 'The Making of Religion' বই এ আন্দামান আইসল্যান্ড বাসীর সম্পর্কে লিখেন। যারা মানব সভ্যতা থেকে ২০-২৫ হাজার বছর ধরে বিচ্ছিন্ন। ১৮শ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত তাদের সম্পর্কে কেউ কিছু জানতো না। তারা একজন মহা ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন।
৪/ EDWARD HORACE MAN. তিনিও তার বই 'The Aboriginal Inhabitants of the Andaman islands' এ আন্দামান আইসল্যান্ড বাসীর ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে লিখেছেন। তিনি দীর্ঘ ১১ বছর তাদের সাথে থাকেন। এবং তাদের ভাষা শিখে, ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে জানেন। যে কারণে বৃটিশ গভর্মেন্টে তাকে পুরস্কৃত করেন। তিনি বলেন, তারা 'একজন সুপ্রিম গড'এ বিশ্বাসী ছিলেন। অর্থাৎ তারাও একজন মহা দেবতাকে বিশ্বাস ককতেন।
৫/ LEOPOLD POSPISIL. তিনি একজন নর বিজ্ঞানী ছিলেন। পশ্চিম আফ্রিকার 'কাপাওকু সম্প্রদায়' এর ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে একটি বই লিখেন, 'The kapauku Popuans of New Guinea' । তিনে লিখেন, কাপাওকু সম্প্রদায় 'হুগাটেইন' নামক একজন স্রষ্টার ইবাদত করতেন৷ যাকে তারা মহা দেবতা হিসাবে বিশ্বাস করতেন। এবং এটাও বিশ্বাস করতেন যে, হুগাটেইন দেবতার কোন অস্তিত্ব নেই। তাকে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না। তাই তারা অন্যান্য দেবতার মূর্তি বানালেও 'হুগাটেইন' এর মূর্তি বানাতো না।
আরো অসংখ্য রেফারেন্সে কোর্ট করা যাবে এ বিষয়ে যে, সর্বকালে সর্বযুগে মানুষ একজন মাহা দেবতার ইবাদত করতেন। যাকে ধরা যায় না, দেখা যায় না। যেমনটা ইসলাম ধর্ম বলে। হ্যাঁ, তবে অনেক সম্প্রদায় মহা দেবতার সাথে অন্যকাউকে ডাকতো। যেটাকে ইসলাম 'শিরক' বলে। এ বিষয়টি এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় নয়।
ওই প্রবন্ধে আরো বলা হয়, 'সেই সাথে হিন্দু ধর্মে নাকি ৩৩ কোটি দেবদেবী। তাদের মধ্যে যে কোন একটি সত্য হতে পারে। আবার একই সাথে কয়েকটি বা সবকটি দেবতাও সত্য হতে পারে। তাহলে আল্লাহর সত্য হওয়ার সম্ভাব্যতা আরো কমে যাবে।'
কী হাস্যকর যুক্তি! নাস্তিকগুরুদের যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে অনুসারীদের অবস্থা যে কী, সেটা আল্লাহ মালুম!!
-হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ বলে, স্রষ্টা মাত্র একজন, দ্বিতীয় কেউ নেই। (উপনিষদসমূহ, অধ্যায় ৬, অনুচ্ছেদ ১)
-স্রষ্টার বাবা মা নেই। তার চেয়ে বড় কেউ নেই। (উপনিষদসমূহ, অধ্যায় ৬, অনুচ্ছেদ ৯)
-ওই সব লোক, যাদের বিচার বুদ্ধি কেড়ে নিয়েছ জাগতিক আকাঙ্খা তারাই উপদেবতার উপাসনা করে।(গীতা, অধ্যায় ৭, অনুচ্ছেদ ২০)
এ বিষয়টাতে নাস্তিক ভাইয়েরা আরেকটা যুক্তি দেয়। যেটাকে বলা হয়, 'Argument from Ignorance Fallacy'( অজ্ঞাতার কুযুক্তি বা ফ্যালাসি)। যেমন ধরুন,কেউ এক হাজার টাকা পেলো আর ৪২০০ জন মানুষ এসে প্রত্যেকে বললো, এটা আমার টাকা। তখন যে ব্যক্তি টাকা পেয়েছে, সে বললো, একটা মাত্র নোট। দাবী করছে ৪২০০ জন মানুষ। সুতরাং এ টাকার মালিকই নেই। এটাকেই বলা হয়, "অজ্ঞাতার কুযুক্তি বা ফ্যালাসি'।
ঠিক এই কুযুক্তিটাই নাস্তিক ভাইয়েরা দিয়ে থাকেন। ৪২০০টি ধর্ম। এতো ধর্মের মাঝে কোনটা সঠিক। সুতরাং আল্লাহ নেই। এবার যদি নাস্তিকদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়!
আহমাদ আব্দুর রাজ্জাক।
লেখক ও গবেষক, সত্যমনা ব্লগ ।
COMMENTS